
স্মরণ – বাউল সাধক উকিল মুন্সি
———————————————–
উকিল মুন্সি ভাটি বাংলার একজন বিখ্যাত বাউল সাধক।
জন্ম ১১ জুন ১৮৮৫ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার নূরপুর বোয়ালী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে।
পিতার নাম গোলাম রসুল আকন্দ। মাত্র ১০ বছর বয়সে পিতৃহারা এতিম শিশু উকিল তাঁর বাবার ফুফাত ভাই মোহনগঞ্জের জালালপুর গ্রামের কাজী আলিম উদ্দিনের বাড়িতে চলে আসেন।
উকিল তাঁর ডাক নাম, আসল নাম আব্দুল হক আকন্দ। শৈশবে তিনি মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন।
৩১ বছর বয়সে তিনি জালালপুর গ্রামের লবু হোসেনের সুন্দরী কন্যা হামিদা আক্তারের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পূর্বে তাঁদের প্রেম এলাকায় আলোচিত ছিলো।
এ সময় তিনি রচনা করেন প্রেমের গান, বিরহের গান। যে গানে মানুষের মনে যৌবনের ইহজাগতিক কামনা-বাসনা প্রতিফলিত হয়।
জগৎ, সংসার আর জীবনের মিশ্র গান লিখে এবং নিজের সুরে নিজের কন্ঠে গান গেয়ে মানুষের মনে ঠাঁই করে নেন উকিল মুন্সি।
ক্রমান্বয়ে তাঁর গান জনপ্রিয় হতে শুরু করে। অল্প সময়ে বিশাল জলরাশির হাওরাঞ্চলে তাঁর সুর, বাণী ও গায়কী মানুষের মন কেড়ে নেয়। তাঁর গায়কী মানুষকে ব্যাকুল করে তোলে। তিনি হয়ে উঠেন বিখ্যাত বাউল গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক।
মধ্য বয়সে স্রষ্টার প্রেমে মগ্ন হয়ে জীবনের সেরা গানগুলি রচনা করার সময় তিনি হবিগঞ্জের শরিয়তের পীর মোজফফর আহম্মদ সাহেবের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
পীর সাহেবের প্রেরণা ও নিদের্শনায় একসময় তিনি হয়ে উঠেন বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত সম্পদ।
যৌবনকালে একতারা আর চটিয়া বাজিয়ে গান গেয়ে মাতিয়েছেন যুব সমাজকে।
গানের শব্দ চয়নে তিনি ব্যবহার করেছেন অপূর্ব উপমা। তাতে স্বাক্ষর রেখেছেন হাওরের মাটির স্রোতধারা, ভালবাসা, প্রেম ও বিরহের।
খ্যাতি অর্জন করা সেই বাদ্যযন্ত্র আর ঝংকার বন্ধ হল এক সময়। তিনি শেষ বয়সের হদয়পর্শী আবেগমাখা বিরহ বিচ্ছেদের গানে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার না করে খালি ভরাট গলায় গান গাইতেন।
১২ ডিসেম্বর ১৯৭৮ সালে মোহনগঞ্জের জৈনপুর গ্রামে সাধক উকিল মুন্সির জীবনাবসান ঘটে।
তাঁর রচিত সহস্রাধিক গান এখনও তাঁর স্মৃতি ধারণ করে চলেছে।
অসাধারন মেধাবী, সুন্দর অবয়ব, সঙ্গীত সাধক, ধার্মিক ও প্রতিভাবানসহ সর্বগুণে কীর্তিমান, বিনয়ী এই মানুষটি একদা যে মুন্সিয়ানার জন্য ‘মুন্সি’ উপাধি পেয়েছিলেন মানুষের অন্তরে তা যুগ যুগ থাকবে অমলিন।
তথ্যসূত্রঃ ‘দৈনিক ইত্তেফাক’
১২ ডিসেম্বর ২০০৭
অনুলিখনঃ — মেসবা খান